মোঃরোমান আকন্দ,গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি।
বিগত কয়েক বছর ধরে কালের আবর্তনে সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে গেছে নানা রংবে রংয়ের ঘোড়ার গাড়ী । ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের ভিড়ে শহর কিংবা গ্রাম গুলোতে ঘোড়ার গাড়ী আগের মতো চোখে পরে না।যদিও চোখে পড়ে সেগুলো আবার চরঅঞ্চল গুলোতে চরের বুকে মরুর জাহাজ বলে মনে হয়।
গাইবান্ধা জেলার তথ্য অনুযায়ী গাইবান্ধা জেলায় ৭ টি উপজেলার ৮২ টি ইউনিয়নে দেড় শতাধিক চর রয়েছে। তবে এসব চরে ঘোড়ার গাড়ির সংখ্যা এখন পর্যন্ত তেমন জানা যায়নি।জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট, করতোয়াসহ বেশ কয়েকটি নদী। নদীবেষ্টিত এই এই জেলায় রয়েছে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। বর্ষায় মৌসুমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের জন্য নৌকা ব্যবহার হলেও গ্রীষ্ম মৌসুমী পানি শুকিয়ে গেলে চরাঞ্চলের বালুতে ঢেকে যায় সড়ক। তাই বালুচরের মানুষদের পরিবহনের একমাত্র বাহন হয়ে দাঁড়ায় ঘোড়ার গাড়ি।যখন জেলার আধুনিকায়ন ছিল না সে সময় জেলার প্রায় সব অঞ্চলেই দেখা মিলত ঘোড়ার গাড়ির।কিন্তু আধুনিকতার হাত ধরে পরিবর্তন হচ্ছে এসব যানবাহনের।তাইতো এখন শুধু চরেই মিলছে ঘোড়ার গাড়ি। আগে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ছিল চোখে পড়ার মতো।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার বিভিন্ন চরে মালামাল পরিবহনে শুধুমাত্র ব্যবহার হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। এই গাড়ি ব্যবহারের ফলে যেমন দ্রুত সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া সহজ হচ্ছে , তেমনি কমছে পরিবহন খরচও।
তাইতো বলতে ইচ্ছে করে,মরুর জাহাজ উটের পথ ধরে চরের জাহাজ হয়েছে ঘোড়া। টেনে ছুটিয়ে নিয়ে যায় তৈরি কৃত এক ধরনের গাড়ি, যা দেখতে অনেকটা গরুর গাড়ির মতো। তবে চরাঞ্চলে ধুলোবালি দ্বারা পরিপূর্ণ রাস্তা হওয়ায় এই গাড়ি গরুর শক্তিতে সহজে চলতে পারে না। তাইতো প্রয়োজন হয় অশ্বশক্তি। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে চরের জাহাজ হয়েছে ঘোড়ায় চালিত বিশেষ গাড়ি। অতীতের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় চরের মানুষ ঘোড়ায় চালিত এই গাড়ি উদ্ভাবন করেছে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট, করতোয়ার চরে এমন গাড়ি যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ধরে রেখেছে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি।তপ্ত বালির ওপর দিয়ে হেঁটে দীর্ঘ চর পাড়ি দিতে মানুষকে করতে হয় না আর কষ্ট।এর পাশাপাশি দূরের হাটবাজারে পণ্য নিয়ে যাওয়ার কষ্ট দূর হয়েছে।
ঘোড়ার গাড়ি তৈরির কারিগরদের কাছ থেকে গাড়ি তৈরির কথা জানতে চাইলে তারা জানান, প্রতিটি গাড়ি তৈরি করতে খরচ পড়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। মান ভেদে একটি ঘোড়া কিনতে লাগে প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। বর্তমান বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় গাড়ি তৈরি এবং ঘোড়াদ এমন একটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘোড়ার খাবার ছাড়া এসব গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে আর তেমন খরচ প্রয়োজন হয় না। বালুচর ও অসমতল সড়কে অনায়াসে ঘোড়ার গাড়িতে পণ্য পরিবহন করা যায় বলে দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে।
অন্যদিকে ঘোড়ার গাড়ির চালকেরা জানান, সুস্থ-সবল ঘোড়া দিয়ে একটি গাড়িতে ১৫ থেকে ২০ মণ পণ্য পরিবহন করা যায়। পাশাপাশি বালুচর পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যাতায়াত করতেও ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। আর এসব গাড়িতে পণ্য পরিবহন করে দৈনিক ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা উপার্জন করছেন গাড়িয়ালেরা। তা দিয়েই ঘোড়ার খাবারসহ পরিবারের ব্যয়ভার অনেকটা মেটাতে পাচ্ছে তারা ।
এদিকে বয়স বৃদ্ধরা বলেন,আমরা ছোটবেলায় গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়িতে বিভিন্ন স্থানে যেতাম। আগে গাইবান্ধা শহর অনেক ছোট ছিল। এই শহরে স্টেশন রোডটিই ছিল প্রধান সড়ক। এই সড়কেই চলত ঘোড়ার গাড়ি। সেসময় গ্রামাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়িতে চলাচল ও বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রচলন ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সিএনজি আটোরিকশা ও ইঞ্জিনচালিত গাড়ির কারণে এখন আর ঘোড়ার গাড়ির দেখা মেলে না। এখন ঘোড়ার গাড়ি দেখতে শহরের মানুষ গাইবান্ধার বিভিন্ন নদীর চরে যায়। সব মিলিয়ে ঘোড়া গাড়ি এক অনন্য রূপ সৌন্দর্য দান করছে চরণ অঞ্চলের মানুষকে।