ছাত্রলীগ নেতার নির্দেশে পা ধরে মাফ চেয়েও শেষ রক্ষা হলো না! বাবার মৃত্যু

0
333

হাসপাতালের বিছানায় অসুস্থ বাবা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তার সামনে ছেলেকে নিজের মুখে জুতার বাড়ি দিতে বাধ্য করেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. আরিফুজ্জামান বিপাস। সেসময় বিপাসের পা ধরেও ক্ষমা চাইতে হয়েছে ওই তরুণকে। এ দৃশ্য দেখে আর সহ্য করতে পারেননি বাবা। যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (১০ডিসেম্বর) বিকেলে তার মৃত্যু হয়।

৮ ডিসেম্বর বুধবার ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন (৬২)।

ভুক্তভোগী ওই তরুণের নাম এস এম সরকার ওরফে হোসেন সরকার। তিনিও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের বাড়ি মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর গ্রামে।

মুখে জুতা মারার ঘটনার পর দুঃখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এস এম সরকার লিখেছিলেন, ‘মানুষ কখন আত্মহত্যা করে?’



বাবার মৃত্যুর পর তিনি কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন। শুধু বলছেন, ‘ওরা আমাকে জুতা মারতে বাধ্য করার কারণে অসুস্থ বাবা খুব কষ্ট পেয়েছেন, যে কারণে তাকে বাঁচানো গেলো না।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. আরিফুজ্জামান বিপাসের পা ধরে মাফ চাচ্ছেন এস এম সরকার। কথোপকথনের একপর্যায়ে পা থেকে জুতা খুলে দেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. আরিফুজ্জামান বিপাস। হোসেনকে নিজের গালে সেই জুতা দিয়ে আঘাত করার নির্দেশ দেন তিনি। নির্দেশ পালনে কয়েকবার নিজের মুখে জুতার বাড়ি দিতে বাধ্য হন এস এম সরকার।


সেখানে মা মোছা. খাদিজা খাতুনও দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছুই করার ছিলো না তার। ছেলেকে জুতাপেটা করতে দেখে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা।

এম সরকারের ভগ্নিপতি মোমিনুর রহমান জানান, এস এম সরকার হোসেন ছাত্রলীগ করেন। মাঝে কিছুদিন ঢাকায় ছিলেন। অল্প দিন হলো বাড়িতে এসেছেন। তিনি ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের বিপক্ষে ছিলেন। দুই পক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা লেখালেখি করে। এই লেখালেখি নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুজ্জামান ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।

তিনি আরও জানান, তার শ্বশুর গিয়াস উদ্দিন সরকার ৭ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং কিছুটা সুস্থতার দিকে যাচ্ছিলেন। হাসপাতালে বাবার পাশে ছিলেন ছেলে হোসেন। সেখানে তার মা মোছা. খাদিজা খাতুনও ছিলেন। এক দিন পর ৮ ডিসেম্বর রাতে ছাত্রলীগ নেতা আরিফুজ্জামান বিপাস তিন চারজনকে নিয়ে হাসপাতালে যান। তারা হোসেনকে পেয়ে অসুস্থ বাবা ও পাশে থাকা মায়ের সামনেই তার ওপর চড়াও হন। ফেসবুকে নানা কথা লেখার প্রসঙ্গ তুলে চাপ সৃষ্টি করেন। এ সময় হোসেন তাদের আক্রমণাত্মক পরিস্থিতি দেখে ক্ষমা চান। একপর্যায়ে পায়ে ধরেও ক্ষমা ভিক্ষা চান।

এরপরও ছাত্রলীগ সভাপতি নিজের পায়ের জুতা খুলে এগিয়ে দেন। হুকুম দেন নিজের মুখে জুতার বাড়ি মারতে। উপায় না দেখে হোসেন নিজের মুখে জুতা দিয়ে বাড়ি মারেন।

এদিকে হোসেনের বাবার অবস্থার অবনতি হলে ৮ ডিসেম্বর মহেশপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যশোর হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে মৃত্যু হয় তার। রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ বাড়ির কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

জুতা মারার ঘটনা সরাসরি অস্বীকার করেননি ছাত্রলীগ নেতা আরিফুজ্জামান। তবে ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, তারা ওই কর্মীর অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রানা হামিদ জানান, হাসপাতালে ভর্তি মুমূর্ষু বাবার বেডের পাশে বসে পায়ের জুতা খুলে দিয়ে হোসেন নামের এক কর্মীকে নিজের গালে আঘাত করতে বাধ্য করার দৃশ্য ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক। এ কারণে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।