মোঃ মোমিনুল ইসলাম দিনাজপুর প্রতিনিধি:দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ডাকটিকিট নিয়ে নির্মিত ৫৩ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র ‘স্বাধীনতার ডাকটিকিট’। যা তৎকালীন মুজিবনগর সরকারের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধি বর্তমানে দিনাজপুর-৪ (খানসামা- চিরিরবন্দর) আসনের পরপর তিন বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি’র দক্ষতা, পরিকল্পনা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে সারা বিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। সেই স্বাধীনতার ডাকটিকিট নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রটি সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে হোসেনপুর ডিগ্রি কলেজ, খানসামা ডিগ্রি কলেজ, পাকেরহাট গ্রোয়ার্স মার্কেট এবং চিরিরবন্দর উপজেলা কনভেনশন সেন্টারে প্রদর্শন করা হয়।
এছাড়াও মুজিববর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপী বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্র- পত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রামাণ্যচিত্রটির প্রচারণা দেখে সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, দলীয় নেতাকর্মী, সাধারন মানুষ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
প্রামাণ্যচিত্রের সূত্রমতে, ‘স্বাধীনতার ডাকটিকিট’ প্রামাণ্যচিত্রটিতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময় তদানিন্তন মুজিবনগর সরকারের আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্যের তৎকালীন সাবেক পোস্টমাস্টার জেনারেল এবং লেবার পার্টির এমপি জন স্টোনহাউজ এবং লন্ডনের অধিবাসী বিখ্যাত ডাক টিকিট নকশাবিদ জনাব বিমান মল্লিকের সম্মিলিত উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ২৯ শে জুলাই মুজিবনগর সরকার ও যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহর থেকে বাংলাদেশের ৮ টি ডাকটিকিট প্রকাশ এবং যুক্তরাষ্ট্র হতে প্রচার ও বিক্রির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টির ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রথম ৮টি ডাকটিকেটের প্রকাশ, প্রচার ও বিক্রির ইতিহাস সার্বিকভাবে তুলে ধরার প্রয়াসে, এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ডাকটিকিট নকশাবিদ জনাব বিমান মল্লিকের, ১৯৭১ সালের ৮ই অগাষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস্ পত্রিকায় ডাকটিকিটগুলো প্রকাশের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার ক্ষেত্রে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন অর্থ-মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ডাকটিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের বিষয়ের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে ১৯৭১ সালে মুজিরনগর সরকারের ডাক ও টেলিগ্রাফ বিভাগের সহকারী সচিব এবং অবসরপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা সচিব মোহাম্মদ ইদ্রিস আলীর বর্ণনাধর্মী সাক্ষাৎকার ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র থেকে আরো জানা যায়, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সার্ভিসে যোগদান করেন এবং ২ বছর পর ১৯৬৮ সালের অগাস্ট মাসে তৎকালীন পাকিস্তান কনস্যুলেটে ভাইস কনসাল হিসাবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে ২৬ এপ্রিল তিনি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। এরপর মুজিবনগর সরকার তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরপর মে মাসে মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে ৮ টি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশের বিষয়টি তাকে অবগত করা হয় এবং বিশ্বব্যাপী এই সংবাদটি প্রচারে উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ করা হয় । শত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও কীভাবে তিনি বাংলাদেশের ১ম ৮টি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশের সংবাদটি নিউইয়র্ক টাইমস্ এর ৮ ই আগস্ট সংখ্যার স্ট্যাম্প সেকশনে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং সেই সাথে যেসব বিদেশী বন্ধুরা এই ডাকটিকিট গুলো প্রকাশের সংবাদটি প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন; নিউইয়র্ক টাইমস্ ও জাতিসংঘ প্রতিনিধি ক্যাথলিন টেল্টস , নিউইয়র্ক টাইমস্ এর স্ট্যাম্প বিভাগের সম্পাদক ডেভিড লিডম্যান, নিউইয়র্ক টাইমস্ এর দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি সিডনি শনবার্গ তাদের অবদানের বর্ণনা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেন।
ফলে “স্বাধীনতার ডাকটিকিট” প্রামাণ্য চিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রথম ৮ টি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ এবং নিউইয়র্ক টাইমস্ এর মাধ্যমে সংবাদটি প্রচারের পূর্ণ ইতিহাস সার্থক ভাবেই তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন নির্মাতা নাসরিন ইসলাম।
তথ্যনির্ভর প্রামাণ্যচিত্রটিতে বিমান মল্লিক ২৯ শে জুলাই দিনটিকে শুধুমাত্র বাংলাদেশের ডাকটিকিট দিবস হিসেবে নয় বরং আন্তর্জাতিক ডাকটিকিট দিবস হিসাবে ঘোষনার প্রস্তাব করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের ইতিহাসে এই ৮টি স্মারক ডাকটিকিট যে ভূমিকা রেখেছে তা ইতিহাসে বিরল এবং ডাকটিকিটের বৈশ্বিক ইতিহাসেও এটি একটি অনন্য ঘটনা।