মাতৃভাষায় বই পেলো বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা

0
248

আবুবকর ছিদ্দীক বান্দরবান জেলা প্রতিনিধিঃপ্রাক-প্রাথমিকের পর, এবার প্রাথমিকে মাতৃভাষায় বই পেলো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে রয়েছে বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের বই। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি মাতৃভাষার বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সাড়ে ৩২ হাজার শিক্ষার্থী। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক না থাকায় মাতৃভাষা শিক্ষা কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় সংশ্লিষ্টরা।

বান্দরবানে জেলায় চাকমা মারমা ত্রিপুরা বম খুমী খেয়াং লুসাইসহ রয়েছে ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব কৃষ্টি কালচার ও ভাষা। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অনেক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষা বিলুপ্তির পথে। তাই পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের ভাষা ও বর্ণমালা সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০১৭ সাল থেকে সরকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিজ নিজ মাতৃভাষার বই পুস্তকে লিপিবদ্ধ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্য বই হিসেবে বিতরণ করে আসছে।

তারই ধারাবাহিকতায় বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় পাঠ্য বই বিতরণের পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী চাকমা মার্মা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের নিজ মাতৃভাষার বই ও বিতরণ করা হচ্ছে।

এবছর জেলার সাতটি উপজেলায় ২৩ হাজার ২৬৮ টি মারমা মাতৃভাষার বই, ৭ হাজার ৯৫টি ত্রিপুরা মাতৃভাষার বই এবং ২ হাজার ২৬৬টি চাকমা ভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের নিজ মাতৃভাষার বর্ণমালা শিখাতে সপ্তাহে একদিন পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিদ্যালয়ে নিজ মাতৃভাষার এসব বই পড়ানো হয় বলে জানান শিক্ষকরা।


নতুন বই নিতে আসা ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেন, আমরা তো নিজ ভাষায় পড়তে পারিনি। আমাদের ছেলে-মেয়েদের নিজ ভাষার অক্ষর জানার সুযোগ হলো। নিজের ভাষায় বর্ণমালা সম্পর্কে জানতে পারবে, লিখতে পারবে ও পড়তেও পারবে। সন্তানরা মাতৃভাষায় বই পাওয়ায় আমাদের খুবই ভালো লাগছে।

নিজেদের ভাষা ও বর্ণমালা শিখতে ও সংরক্ষণে সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও পর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা এসব বই সঠিকভাবে পড়তে পারছে না বলে জানায় অভিভাবকরা। তাই বিদ্যালয়ে মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ দানের দাবি জানায় তারা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম জানান, এবার বান্দরবানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির শিক্ষার্থীর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে মাতৃভাষায় ছাপানো ৩২ হাজার ৬৪৯টি বই।

তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট এবং দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় সব বিদ্যালয়ে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে। তবে আমরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি ভবিষ্যতে এ সমস্যার সমাধান হবে।

২০১৭ সালে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের জন্য নিজ ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে সরকার। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় শিক্ষক সহায়িকা ও শিখন চর্চা খাতা পায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা।