মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসির দক্ষতায় মেম্বারের বাড়িতে ডাকাতির নাটক ফাস, রক্ষা পেলো নিরিহ মানুষ

0
398

ফয়সাল হাওলাদার/মে‌হেন্দীগঞ্জ প্রতি‌নি‌ধি:
মেহেন্দিগঞ্জের বাহাদুরপুর গ্রা‌মে এক ইউপি সদ‌স্যের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা‌কে সাজা‌নো নাটক ব‌লে দাবী ক‌রে‌ছে পু‌লিশ। থানার ওসি জা‌নি‌য়ে‌ছেন, ঘটনার রা‌তে বাহাদুরপু‌রে কোস্টগা‌র্ডের অ‌ভিযা‌নে অস্ত্র উদ্ধা‌রের ঘটনা ধামাচাপা দি‌তে প্রতিপক্ষ‌কে ফাসা‌তে এ ডাকা‌তি নাটক সাজা‌নো হ‌য়ে‌ছে। এ ঘটনা উদঘট‌নে এলাকাবাসীর ম‌ধ্যে স‌স্তি নে‌মে এ‌সে‌ছে।

থানার চৌকস অফিসার ইনচার্জ মোঃ শফিকুল ইসলাম’র দক্ষতায় ইউ‌পি সদস‌্য আমির জমদ্দার’র বাড়িতে ডাকাতির নাটক ফাস হ‌য়ে যাওয়ায় রক্ষা পেলো নিরিহ মানুষ এমনটাই ধারনা এলাকাবাসীর। জানা গে‌ছে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অপকৌশল হিসাবে বাড়িতে ডাকাতি- হামলা ও লুটপাটের নাটক সাজায় সদর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের ইউ‌পি সদস‌্য আমির হোসেন জমদ্দার ও তার ছেলে সোহাগ জমদ্দার।

বুধবার (১লা সেপ্টেম্বর ) রাত আনুমানিক ৩টার সময় ডাকাতির অভিযোগ করেন। সংবাদ পেয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম’র নির্দেশে এস আই মাহামুদ সহ সঙ্গীয় ফোর্স সকালে ঘটনাস্থলে যান। ঘটনার বিবরণ দিয়ে পুলিশ জানায়, ওই রাতে ভোলার কোষ্টগাড সে এলাকায় অভিযান পরিচালন করেন। পুলিশ আরও জানায়, মেম্বার’র পরিবারের অভিযোগ বিস্তারিত শুনে কথাগুলো অসঙ্গতি মনে হয় তাদের কাছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সে বাড়িতে ডাকাতির নাটক সাজালেও পুলিশের বিচক্ষনতায় আইনের চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি পরিবারটি। এ বিষয়ে থানার ওসি মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই বাড়িতে ডাকাতি নয়, এলাকার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ডাকাতির নাটক সাজায় তারা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এ কারনে অভিযোগটি আমলে নেওয়া হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি জানান, ডাকাতির ঘটনাটি সাজানো ও পরিকল্পিত। প্রায় ২-৩ মাস পূর্বে ইউপি পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান বিরোধের জেরে ডাকাতির মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয় আজাদ ভূইয়ার পরিবারের বিরুদ্ধে। হামলা লুটপাট ও ভাংচুর’র অভিযোগটি ভিত্তিহীন। ঘটনার পরের দিন সকাল ১১ টায় কোষ্টগার্ড দক্ষিন জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা আমিরুল হক বিএম একটি প্রেস রিলিজ দেন। এতে উল্লেখ করা হয় মেহেন্দিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৯ নং বাহাদুরপুর গ্রামের গনেষপুর নদীর তীরবর্তী একটি টংঘর থেকে একটি দেশিয় পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও কোষ্টগার্ড’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই রাতে সন্দেহভাজন হিসাবে মেম্বার’র ছেলে সোহাগ জমদ্দারকে বাড়ি থেকে আটক করা হয় পরবর্তীতে নির্দোষ প্রমাণীত হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের বাড়িতে হামলা ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।

একটি গোপন সুত্রে জানা যায়, সোহাগ জমদ্দার এক সাংবাদিকের কাছে স্বীকার করেন তার বাড়িতে ওই দিন রাত আনুমানিক ৩টার সময় কোষ্টগার্ডের একটি টিম ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে তাকে আটক করে চোখ-মুখ বেধে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সাংবাদিকদের কাছে মেম্বার’র বাড়িতে ডাকাতি অভিযোগের নেপথ্য কাহিনী তুলে ধরেন ওসি। তিনি বলেন, সেখানে একটি পরিবারের সাথে মেম্বার আমির জমদ্দার ও তার ছেলে সোহাগ জমদ্দার’র সাথে মামলা মোকদ্দমা চলছে। প্রতিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করতে এমনটা করেছে। পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলেন, ওসির দক্ষতায় সাজানো ডাকাতি মামলা থেকে রক্ষা পেলো নিরীহ মানুষ।

প্রসঙ্গত গত বৃহস্পতিবার সকালে আমির জমদ্দার ও তার ছেলে সোহাগ জমদ্দার অভিযোগ করেন, বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩ টার সময় তাদের ঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার সময় ঘরে ছিলেন আমির জমদ্দার’র বড় ছেলে সোহাগ জমদ্দার ও তার স্ত্রী সনিয়া বেগমসহ তাদের ৩ সন্তান। তাদের দরজার সিটকানী ভেঙে ১০-১২ জনের একটি মুখোশধারী ডাকাতদল ঘরে প্রবেশ করে দেশীয় অস্ত্রের মুখে তাদের জিম্মি করে । অভিযোগ ডাকাতদল ওয়ারড্রব, সুকেশ ভেঙে এবং নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায় । ৭৫ হাজার টাকা এবং আনুমানিক ৪ভরি স্বর্ণ নিয়ে যায়। এসময় সোহাগকে হাত ও চোখ বেধে মারধর করতে করতে আনন্দবাজার নিয়ে যায়। পরে মানুষের টের পেয়ে ছেড়ে দেয়। তার বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরত্ব হবে আনন্দ বাজার।

সোহাগ ও তার স্ত্রী বলেন, তারা ৪ জন ডাকাতকে চিনতে পেরেছেন। ডাকাতদল সোহাগকে হুমকি প্রদান করে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা পূর্বের একটি মামলা প্রত্যাহার করতে বলেন । ওই মামলার বাদী সোহাগ জমদ্দার। সোহাগ’র ভাষ্যমতে আজাদ ভূইয়া, জামাল মৃধা, রব হাওলাদার ও খালেক খান তাদের বাড়িতে ডাকাতি করেন। অভিযুক্ত আজাদ ভূইয়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া সদর ইউপির নির্বাচনে সোহাগ জমদ্দারের পিতা বর্তমান মেম্বার আমির জমদ্দার’র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। নির্বাচন নিয়ে উভর পরিবারের মধ্যে হামলা-মামলা চলে আসছে। এ বিষয়ে আজাদ ভূইয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এলাকায় নেই, এছাড়াও ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমাকে সামাজিকভাবে অপদস্ত করার জন্যই ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি আইনি প্রতিকার চাইবেন বলে জানান সাংবাদিকদের।