অবৈধ ড্রেজার, অপরিকল্পিত ড্রেজিং, নদী নাব্যতা; পাল্টে যাচ্ছে মেহেন্দিগঞ্জের মানচিত্র।

0
297

মেহেন্দিগঞ্জ প্রতিনিধি // নদীকে শাসন করা ও নদী শাসিত হওয়া দুটোই যখন চলে সমানতালে, তখন অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে এবং পাল্টে যায় মানচিত্র।

বলছিলাম বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কথা। মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নদী বেষ্টিত একটি দ্বীপ অঞ্চল। এই দ্বীপ অঞ্চলে অভ্যন্তরিন যাতায়াত স্থলপথে হলেও বাহ্যিক যাতায়াত নদীপথ ছাড়া কোন উপায় নেই। কিন্তু এখানেই মূল সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে মেহেন্দিগঞ্জ বসবাসরত জনগণের জন্য।




মেহেন্দিগঞ্জের চারদিকে নদ-নদীতে লক্ষ করা যায় অবৈধ ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত ড্রেজিং। যার ফলে নদীপথের গতি পাল্টে গিয়ে নদী ভাঙ্গন থেকে শুরু করে বসতভিটা নদী গর্ভে চলে গিয়েছে।

মেহেন্দিগঞ্জের সব কয়টি ইউনিয়নে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে এই অপরিকল্পিত ভাবে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু খেকোর দল বালু উত্তোলন করার কারনে। এবং অনেকাংশে নাব্যতার জন্য নদীপথে লঞ্চ ট্রলার চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে।

দেখা যায়, কালাবদর নদীর পাতারহাট বন্দর’র নতুন ষ্টীমারঘাট’র স্থানে অপরিকল্পিত ড্রেজিং’র ফলে নদীতে বিশাল বিশাল চর পরে লঞ্চ ট্রলার যাতায়াতের বাধা সৃষ্টি করছে এবং লেঙ্গুটিয়ার নদীর পার দিয়ে বিশাল চর পরেছে ও নদীর এপারে সিন্নিরচর এলাকায় নদী ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে।




এছাড়াও, ০৫ নং মেহেন্দিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাদেকপুর, রুকুন্দি এলাকায় ভাঙ্গনের কারনে দিনাদিন শতাধিক বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ১২ নং দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়নের অবস্থা আরো নাজুক অবস্থা, দুইটি প্রাইমারি স্কুল ও একটি মাদ্রাসা নদী গর্ভে, জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের সাত গাঁ আজিজিয়া দাখিল মাদ্রাসা ৩ বার ভাঙ্গনের কবলে পরার কারনে বেহাল অবস্থা, গোবিন্দপুর ইউনিয়নের অস্তিত্ব নেই কোন, শ্রীপুর ইউনিয়নের দক্ষিন পাশ দিয়ে ভাঙ্গনের কারনে নদীর গতিপথ পালটে গিয়ে হুমকীর মুখে শ্রীপুর ইউনিয়নবাসী। ভাসানচর ইউনিয়নে যেমন ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে তেমনি আবার নদীর মাঝে চর পরে লঞ্চ চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়।

০৩ নং চর এককরিয়া ইউনিয়নের ০১ নং লতা ওয়ার্ডের লালখারাবাদ’র নদীতে বিশাল চরের কারন লঞ্চ চলাচল তো দুরের কথা খেয়া পারাপার ও করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

জয়নগর ইউনিয়নে দুটি প্রাইমারী স্কুল নদী ভাঙ্গনের কবলে পরে তলদেশে নিমজ্জিত, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চরশেফালী নতুন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙ্গনে নিয়ে গেছে, এভাবেই এই অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা কঠিন থেকে আরো কঠিন হিতে চলেছে।




এছাড়াও ১নং আন্দামানিক, ২নং লতা, ৩নং চরএককরিয়া, ৪নং উলানিয়া , ৬নং বিদ্যানন্দন পুর,৮ংচরগোপালপুর, ৯নং আলিমাবাদ, ১২নং দরিচর খাজুরিয়া ,১৫নং জয়নগর ইউনিয়নে লাইসেন্স বিহীন অবৈধ ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেজিং এর কাজ করে আসছে যার ফলে নদীর পার ভেঙ্গে গিয়ে আবাদি জমি বিনষ্ট হয় এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পরে।

লালখারাবাদ তাজউদ্দিন এর খেয়াঘাটের ওখানে এখনও বালূ কাটার ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়, চানপুর ও উলানিয়ার মাঝামাঝি ফজরগঞ্জ এলাকায় দেখা যায় নি এর কোন ভিন্নমাত্রা।


বর্তমানে এসব চিত্র হওয়ার পেছনে নেপথ্যে কারন রয়েছে অপরিকল্পিত ড্রেজিং, লাইসেন্স বিহীন ড্রেজার ব্যবহার করে এই ড্রেজিং’র কারনে ভেঙ্গে যায় হাজারো পরিবারের সপ্ন ও বসতভিটা।



জনমনে প্রশ্ন, এই আত্মঘাতী ড্রেজার গুলো কি প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে নাকি দেখেও না দেখার ভান করে চলছে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই অভিযোগ করেন যে, যারা এই লাইসেন্স বিহীন অবৈধ ড্রেজার চালায় এবং নদী থেকে বালু উত্তোলন করে তারা দলীয় সীল গায়ে লাগিয়ে এরপর এই কাজ করে।

ধারণা করা যায়, বালুখেকোর দল অবৈধ ভাবে ড্রেজার ব্যবহার করে বছরে ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা আয় করে, যার একটা অংশ বড়ো কর্তা বাবুদের পকেটে যায় বলে এরা সব সময় ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যায়।

যেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে নদী ভাঙ্গন রোধ করার জন্য নদীতে ব্লক স্থাপন থেকে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন, সেখানে আঞ্চলিক পর্যায়ের বালুখেকোর দল নদীর গভীর থেকে বালু উত্তোলন করে নেয় এতে আবাদী জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যায় এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে পরে।



এ ব্যাপারে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহাদাত হোসেন মাসুদ’র সাথে আলাপকালে এই প্রতিবেদককে জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি ড্রেজার জব্দ ও জরিমানা করা হয়েছে। এবং আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

বরিশাল ০৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ’র সাথে আলাপকালে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান সরকার নদী খনন থেকে শুরু করে নদী নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এছাড়াও এই মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাটি নদী বেষ্টিত ও ভাঙ্গন কবলিত এলাকা, এখানে যারা অবৈধ ড্রেজার দ্বারা অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেজিং করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করবো।