দিনাজপুরে দশমাইল কলার হাটে প্রতিদিন ৮০ লাখ টাকার বেচাকেনা

0
184

মোঃ মিস্টার ইসলাম দিনাজপুর সদর প্রতিনিধি : দিনাজপুরে জেলা কলা চাষের উপযোগী উঁচু থাকায় বাড়ছে কলার উৎপাদন। দিনাজপুরে উৎপাদিত কলা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। আবাদে খরচ কম ও ভালো দাম পাওয়ার নিশ্চয়তার কারণে কলা চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা।


দিনাজপুর দশমাইল কলার হাটে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় কলাচাষি ব্যবসায়ী ও পাইকারদের। বাজারজুড়ে সারি সারি কলার কাঁদি সাজানো। স্থানীয়ভাবে কলার কাদিকে কাইন, ঘাউর, ঘের ও পীর বলা হয়। প্রতিটি কলার কাঁদি বিক্রি হয় ৩৫০-৪৫০ টাকা দরে।


ব্যবসায়ীরা জানান, গতবার প্রতিটি কলার কাঁদি তারা ৩০০-৩৫০ টাকা দরে কিনেছেন। সে হিসাবে এবার কাঁদি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দাম বেড়েছে।
জেলার সবকটি উপজেলায় কলা চাষ করা হয়। তবে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ কলা চাষ হয় জেলার সদর, বীরগঞ্জ, কাহারোল ও বিরল উপজেলায়। শ্রাবণ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে আশ্বিনের শেষ পর্যন্ত ফল তোলার সময়। এই সময় কাহারোল উপজেলার দশমাইল মোড়ে বসে উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বড় কলার হাট। কলা আসে নীলফামারী, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাও জেলা থেকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা কলা কিনতে আসেন দশমাইল হাটে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ভ্যান, নসিমন, পিকআপে করে এই হাটে বিক্রির জন্য কলা আনতে শুরু করেন চাষি ও স্থানীয় কলা ব্যবসায়ীরা। কেনাবেচা শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ট্রাকে কলা তোলা হয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে শেষ হয় হাটের কলা বেচাকেনা।
বীরগঞ্জ উপজেলার কলাচাষি মো. দবিরুল ইসলাম বলেন, কলা চাষে তেমন একটা ঝুঁকি নেই। আজকে ৪০০টি গাছ দিয়ে বাগান শুরু করি। এবার সেখানে ৫০০ গাছের বাগান করেছি। বাগানে মোট খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৫২ হাজার টাকার মতো। এ বছর কলার বাজার ভালো চলছে। এই বাজার শেষ সময় পর্যন্ত থাকলে চার লাখ টাকার মতো কলা বিক্রির আশা করছি।


সদর উপজেলার কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, কলা বিক্রি করতে এখন হাটে আসতে হয় না। পাইকাররা আগেই বাগান দেখে টাকা দিয়ে দেন। তাতে বিক্রির ঝামেলা থাকে না।
কলা কিনতে আসা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমি ঢাকার খিলক্ষেত থেকে কলা কিনতে দিনাজপুরের দশমাইল হাটে এসেছি। এ বছর কলার দাম ভালো। যে কলাটা ছিল ৩০০ টাকা কাঁদি , সেটা এ বছর ৪৫০ টাকা কিনতে হচ্ছে। এবার কলার ব্যবসায় লাভ কম।


দশমাইল কলার হাটের শ্রমিকরা বলেন, প্রতিদিন এই হাটে ভ্যান, নসিমন ও পিকআপ থেকে আমরা কলা নামাই। আবার কলা ট্রাকে তুলি। আমরা এখানে ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করি। প্রতিদিন ৮শ থেকে এক হাজার টাকা রোজগার করতে পারি।
হাটের ইজারাদার মিজানুর রহমান জানান, মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ লাখ টাকার কলা বেচাকেনা হয় এই হাটে। দশমাইল হাটে শতাধিক পাইকার কলা কিনতে আসেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, দিনাজপুর ফল ও ফসলে ভরপুর জেলা। এই জেলা সুগন্ধী চাল, লিচু, আম, শাক-সবজিতে ভরপুর। দিনাজপুরে এ বছর প্রায় ১২শ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। গত বছরে ৬০০ থেকে ৬৫০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছিল।
তিনি বলেন, জেলায় কলা চাষ জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হচ্ছে কলার বাজার ভালো। অল্প বিনিয়োগে কলা চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। জেলায় এবার ৩৫ হাজার মেট্রিক টন কলা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলার ১৩ উপজেলার কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের কলা আবাদ করেছেন। এর মধ্যে মেহের সাগর, সাগর, চিনি চাম্পা, শোভোরী ও সুন্দরী (মালভোগ) জাতের উচ্চ ফলনশীল কলার আবাদ করা হচ্ছে। বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত কলা গাছের চারা রোপণ করা হয়। এক একর জমিতে এক হাজার কলা চারা রোপণ করা যায়। ১৩ মাস পর চাষিরা ওই কলা ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। কলার দাম ভালো পেয়ে খুশি কৃষকরা।