যশোর সদর ইউপি নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রশাসনিক পদক্ষেপ

0
320

মমিনুর রহমান ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি: যশোর সদরের ইউপি নির্বাচনে অস্ত্রবাজ দুষ্কৃতকারী মাস্তান ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কড়া হুশিয়ারী জারি করেছে যশোর জেলা প্রশাসন। উত্তেজনা আছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুুতিও আছে বলেছেন জেলা প্রশাসক

নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত যশোর সদরের ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। সহিসংতা ও সন্ত্রাসীদের তৎপরতায় প্রার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে প্রার্থীদের মনের গভীরে ছড়িয়েছে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। তবে অবাধ, নির্বিঘ্ন, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর ভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন পরিচালনা সংশ্লিষ্টরা। প্রার্থীদেরকে অস্ত্রবাজ, দুষ্কৃতকারী, মাস্তান ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ‘অ্যালাও’ না করার কড়া হুশিয়ারি দিয়েছেন।

রোববার (২ জানুয়ারি) ৮১ ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর সাথে মতবিনিময় করে সদর উপজেলা প্রশাসন ও নির্বাচন অফিস। মতবিনিময়ে প্রার্থীরা নির্বাচন ঘিরে তাদের উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও সহিংস পরিস্থিতি তুলে ধরে বক্তব্য দেন। মেম্বার প্রার্থীর ভোট কেন্দ্রের বুথে হবে। আর চেয়ারম্যানের ভোট বুথের বাইরে প্রকাশ্যে-দেখিয়ে দিতে হবে; মতবিনিময়ে এমন হুমকির অভিযোগও ওঠে।

মতবিনিময়ে প্রার্থীদের এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন সংশ্লিষ্টরা। ভোটাধিকার নষ্টের কোন চেষ্টা বরদাস্ত না করার সতর্কবার্তা দেয় সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন। আচরণবিধি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে গ্রেফতার করা হতে পারে বলেও হুশিয়ার করেন সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

প্রার্থীদের বক্তব্যে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী দাউদ হোসেন দফাদার বলেন, প্রত্যেকটি গ্রামে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান। তাদের সাথে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা যুক্ত হয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। উপশহর ইউনিয়নের আনারস প্রতীকের প্রার্থী শওকত হোসেন রতœ বলেন, তিনিসহ তার কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারছেন না।

ফতেপুর ইউনিয়নের ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী ফাতেমা আনোয়ার বলেন, অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে তার কর্মী-সমর্থকদের। এগুলো বন্ধের দাবি জানান তিনি। নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলতাফ হোসেন বলেন, ১৮ থেকে ২০ জনের একটি দলের মহড়া থেকে তার বাড়িতে গুলি চালানো হয়েছে। তার কর্মীরা ঘর ছাড়া। ভয়ভীতি দেখানোয় তিনি কোন পোলিং এজেন্ট পাচ্ছেনা।

রামনগরের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের একজন মাহামুদ হোসেন লাইফ বলেন, ভোটার কাছে ভোট চাইতে পারছি না। আমার পক্ষে কেউ কথা বললে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। ভোটের মাঠে গেলে টেবিলে রেখে ওপেন সিল মারতে হবে বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধুমাত্র ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডে একটি অফিস মাত্র নির্বাচনী অফিস করতে পেরেছি। সেখানে কেউ বসলে মেরে বের করে দেয়া হচ্ছে। ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড খুব ঝুঁকিপূর্ণ।

হৈবতপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী হরেন বিশ্বাস তার বক্তব্যে নির্বাচনী এলাকার বাইরের মানুষ এসে যাতে ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে তার দাবি জানান।

যশোর কোতয়ালি থানার (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, এমন কিছু অভিযোগ আছে যেগুলো ভৌতিক। যেসব অভিযোগের ভিত্তি আছে আইনগত প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে তার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’-সার্কেল বেলাল হোসাইন বলেন, নির্বাচনী দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে তার বাহিনী। চুল পরিমাণ ছাড় দেয়া হবেনা। পানি ঘোলা করে কোন কিছু করার সুযোগ পাবে না কেউ।

সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, হুমকি, প্রচারণায় বাধা, পোস্টার ছেড়া এগুলো নির্বাচনী আচরণ বিধির লঙ্ঘন। এসব বন্ধে আজ থেকে কঠোর অবস্থানে যাওয়া হবে। এগুলো করলে গ্রেফতার হলেও হতে পারেন।

পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, প্রার্থীরা নিজেরা মিলেমিশে নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখেন। ৮১ জন প্রার্থীরা সবাই সহনশীল থাকার ওয়াদা করেন। তাহলে ভোটের পরিবেশ সুন্দর থাকবে। প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, অস্ত্রবাজ, দুস্কৃতিকারী, মাস্তানদের ‘অ্যালাও’ করবে না। চাঁদাবাজ ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ‘অ্যালাও’ করবেন না। ভেতরে ভেতরে কেউ যদি এসবের চেষ্টা করেন কোন ছাড় দেয়া হবে না। দুস্কৃতিকারীদের কেউ সমাবেশ করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, সদরের ভোট নিয়ে কিছুটা উত্তেজনা আছে সেটি আঁচ করতে পেরেছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরাপত্তার সব প্রস্তুুতি আছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। শৃঙ্খcলা ভঙ্গ করে ভোটের অধিকার নষ্টের চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশ-র‌্যাব ও ম্যাজিস্ট্রেটরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন।