র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার ওয়ারেন্টভূক্ত কথিত সাংবাদিক বানানোর কারিগর

0
459

কী সর্বনাশের কথা! অক্ষর জ্ঞ্যানহীন একটা মানুষ তিন, তিনটি আইপি টিভি ও একখানা পত্রিকার মালিক বনেছেন। সারাদেশে সাংবাদিকতার কার্ড বিক্রি করেই হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এখানেই শেষ নয়, টাকা পকেটস্থ করার মধ্য দিয়েই তার প্রতারণামূলক কান্ড শেষ হয়নি। তিনি ততোধিক অযোগ্য কয়েক হাজার মানুষকে সাংবাদিক বানিয়ে শহর, বন্দর, গ্রামে ছেড়ে দিয়েছেন। তারা এখন আরো হাজার হাজার মানুষকে প্রতিনিয়ত ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি, প্রতারণাসহ নানারকম অপরাধ তৎপরতায় মেতে থাকছেন হরদম।
র‌্যাব ৪ এর একটি দল ঢাকার সিদ্দেশ্বরী এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাংবাদিক বানানোর কারিগর প্রতারক, চাঁদাবাজ, ভুয়া আইপি টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার মালিক ওয়ারেন্টভূক্ত পলাতক আসামী আজগর আলী মানিক’কে গ্রেফতার করতেই চাঞ্চল্যকর তথ্যাদি বেরিয়ে আসে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী মানিক যাবতীয় অপরাধ অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি স্বাক্ষরজ্ঞানহীন অথচ তিনি একটি দুটি নয় বরং ৩ টি আইপি টেলিভিশন চ্যানেলের চেয়ারম্যান। যেগুলোর নাম সিটিজি ক্রাইম টিভি, সিটিজি টিভি ও বার্তা টিভিসহ আই বার্তা নামে একটি দৈনিক পত্রিকারও সম্পাদক তিনি। তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে সাংবাদিক কার্ড বিক্রি করতেন তিনি। চট্টগ্রামে উত্থান হওয়া এই প্রতারক নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, প্রতারণা, চাঁদাবাজীসহ অন্তত ১০ টি মামলা রয়েছে। মানিক ঢাকায় আত্নগোপন করে ভুয়া সাংবাদিক তৈরীর বানিজ্য চালিয়ে আসছে।

বহুরুপী অপরাধ অপকর্মে জড়িত আলী আজগর মানিক গ্রেফতারের পর পরই একটি মহল তাকে বিএমএসএফ এর সদ্য বহিস্কৃত সেক্রেটারী আহমেদ আবু জাফরের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে সর্বত্র প্রচার প্রচারণা চালায়। মহলটি সেকেন্ড ইন কমান্ড মানিক গ্রেফতার হলেও ওই চক্রের মূল হোতা জাফর জমাদ্দার কেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে? কিন্তু খোঁজ নিয়ে কিছুটা ভিন্ন তথ্য মিলেছে। আহমেদ আবু জাফরের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আলী আজগর মানিককে রাখা হলেও পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বিরোধ বাধে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরেই উভয়ের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে অতিসম্প্রতি বিএমএসএফ দখলের লক্ষ্যে জাফর আজগর নতুন করে জুটি বেধেছে এমন দাবিও করেছেন কেউ কেউ। একটি র‌্যাব ৪ এর অভিযানে গ্রেফতারকৃত আলী আজগর মানিককে মামলাজনিত সূত্রে চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানায় নেয়ার পর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
আলী আজগর মানিক কার সঙ্গে জুটি বাঁধলো, তিনি কার সেকেন্ড ইন কমান্ড তা মূখ্য বিষয় নয়, ভাবনার বিষয় হচ্ছে ভূয়া সাংবাদিক বানানোর কারখানা থেকে কয়েক হাজার কথিত সাংবাদিকের উৎপাদন ঘটেছে। মাত্র তিন চার দিন আগেও জাফর জমাদ্দারের সাংবাদিক বানানোর কারখানার তথ্য পাওয়া গেছে পত্রিকা সূত্রে। সংশ্লিষ্ট পত্রিকার খবর সূত্রে জানা যায়, জাফর জমাদ্দারের ওই কারখানায় নাকি ১৭ হাজার ভূয়া সাংবাদিকের জন্ম হয়েছে। তারাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সারাদেশ। ভূয়া সাংবাদিকদের নিয়ে কিছু লিখলেই ভন্ড বাটপারদের গাত্রদাহ হয়, বেজায় ক্ষেপে উঠেন তারা। এবার র‌্যাবের উদঘাটিত ভয়ানক তথ্যের বিরুদ্ধেও কিছু বলুন শুনি। নিজ গোত্রের গোপন সহযোগীর জন্য নিদেনপক্ষে একটা মানববন্ধনের ডাক দিন অন্তত।