শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায়

0
833

মমিনুর রহমান ভ্রাম্যমান প্রতিনিধিঃশিশুরা দেশের সম্পদ। ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে শিশুদের মোবাইল আসক্তি দিন দিন বাড়ছে। অভিভাবকদের জন্যও বিষয়টি বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশুদের মোবাইল আসক্তি বেড়ে যাওয়ার কারণে পারিবারিক বন্ধন ধারণায় পরিবর্তন আসছে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।
শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায় জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ানলাইট ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও সভানেত্রী শারমিন আহমেদ। তার মতে, মোবাইল নিয়ে শিশুদের আসক্তির (স্ক্রিন এডিকশন) ফলাফল শুভ নয়।

শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমাতে যে কাজগুলো করতে পারেন-

১. শিশুর সঙ্গে গল্প করুন। একাকিত্বে ভোগা থেকে শিশুরা স্ক্রিন আসক্ত হতে পারে। সময়ে পেলে তার সঙ্গে গল্প করতে হবে। শিশুরা ছোটবেলা থেকে গল্প শুনলে এমনকি মাতৃগর্ভে থাকাকালে গল্প শুনলেও তার মানসিক বিকাশ বৃদ্ধি পায়। তাই শিশুকে বেশি সময় দিতে হবে, তার সঙ্গে প্রচুর গল্প করতে হবে।

২. আপনার ঘরের পরিবেশটা কেমন? চারদিকে কি ডিভাইস? ঘরে ঢুকতেই একটা বড় টিভি? আপনিও কি এক মিনিট পর পর ডিভাইস দেখেন? তাহলে এগুলো পরিবর্তন করতে হবে। কারণ শিশুরা প্রথম শিক্ষা পায় পরিবার থেকে। তাই বাবা-মাকে এক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। যতটা সম্ভব শিশুদের সামনে মোবাইল বা ডিভাইস পরিহার করুন।

৩. ঘরের চারদিকে শিশুদের উপযোগী রঙ, তুলি, ছবি আঁকার জিনিস, কালার পেনসিল, বিভিন্ন মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট (বাঁশি, সেতার, ভায়োলিন) রাখতে পারেন। এতে করে আপনার শিশু সেগুলোর প্রতি মনোযোগী হবে। এতে করে সে একা থাকলেও ছবি আঁকার চেষ্টা করবে, মিউজিক বাজানোর চেষ্টা করবে।

৪. বাসায় প্রচুর বই রাখুন। অবসর সময়ে আপনি বই নিয়ে বসে গেলে আপনার সন্তানও আপনার পাশে বসে যাবে। অথবা খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস করুন। আপনাকে দেখেই তার মধ্যে এই অভ্যাসগুলো গড়ে উঠবে।

৫. প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসুন। শিশুদের প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিয়ে যাওয়া খুব জরুরি। শিশুকে নিয়ে বাগানে বা প্রকৃতির মধ্যে খেলাধুলা করুন। লুকোচুরি খেলুন, ছোটাছুটি করুন, সময় কাটান। তাতে শিশুরা সামাজিক হয়ে উঠতে পারবে। নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারবে। যারা শহরে থাকেন তারা সপ্তাহে একদিন বা মাসে দুইদিন শিশুকে নিয়ে প্রকৃতির কাছে যেতে পারেন। তাতে করে আপনার সন্তান মানসিক বিকাশের উন্নতি হবে।

৬. শিশুদের ঘরে কাজে ব্যস্ত রাখতে পারেন। বিশেষ করে মায়েরা এ কাজটি করতে পারেন। আপনার সন্তানকে বলতে পারেন, আজকে তুমি আমাকে এ কাজে সহযোগিতা করো। এতে আপনার সন্তান ঘরের কাজের প্রতি আগ্রহী হবে এবং মোবাইল আসক্তি থেকে সরে আসবে।

৭. ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারেন। নিজের পরিবার সম্পর্কে জানাতে পারেন। আমাদের পরিবারের সদস্যরা পূর্বে কোথায় ছিল, কেমন ছিল, তাদের পেশা কেমন ছিল। দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানাতে পারেন গল্পের ছলে।

৮. শিশুটিকে তার পরিবারে একজন সদস্য হিসেবে গুরুত্ব বোঝাতে হবে। যথাসম্ভব, পারিবারিক বিভিন্ন কাজে আপনার শিশুটিকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী জড়িয়ে নিবেন। হতে পারে সেটা পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠান কিংবা মায়ের কাজে সাহায্য করা।

৯.শিশুর সামনে মোবাইল গেম অথবা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন।

১০. ইহলৌকিক-পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে শিশুদের বোঝাতে চেষ্টা করবেন। আমরা কেউই অনন্তকাল পৃথিবীতে থাকবো না। এই বোধ শিশুর মধ্যে গ্রথিত করতে হবে।