ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঁচাতে অনলাইন গেমস,টিকটক বন্ধ জরুরি: সাংবাদিক শাওন

0
420
শাওন

অফিস ডেস্ক:


ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে অনলাইন গেমস টিকটক সোশল মেডিয়া বন্ধ করা জরুরি । এক টিভি শো’তে “সাম্প্রতিক ভাবনা” প্রোগ্রামে সাংবাদিক শাওন এসব কথা বলেন।



বর্তমান যুগে গেমিং অ্যাডিকশন, সোশ্যাল মিডিয়া, টিকটক, অনলাইন মোবাইল বা ভিডিও গেমে আসক্তিকে মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা হিসেবে ধরা যায়। অন্যান্য নেশার মতো ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করা বা অধিক সময় ধরে অনলাইনে গেম খেলাও একটি আসক্তি। মানুষের মধ্যে এ ধরনের আসক্তিকে বলা হয় আচারণগত আসক্তি। কেবল স্মার্টফোনের সহায়তায় নতুন প্রজন্ম আজ আসক্ত হয়ে পড়েছে অনলাইন গেম সোশ্যাল মিডিয়া নামের এক করুণ নেশায়। ঘরে–বাইরে, রাস্তা–ঘাটে, স্কুল–কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেককে দেখা যায়, পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়ে গেম খেলছে। মাদকাসক্তির মতোই অনলাইন গেম বর্তমান তরুণদের গ্রাস করে ফেলছে। তাই আমাদের এই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঁচাতে অনলাইন গেমস, টিকটক সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করতে হবে সেই সাথে সকল অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।

আজকাল গ্রামাঞ্চলে পাড়া-মহল্লায় লক্ষ করলে দেখা যায়, প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, এমনকি অনার্সপড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তরুণেরাও অনলাইন গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছেন; যা এখন শুধু একটি নেশা নয়, মানসিক সমস্যায়ও পরিণত হয়েছে। এই নেশা বা আসক্তির পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে।

আরও খবর ঃ ঢাকা মহানগরে তরুণ ছাত্রনেতা শাওনের পক্ষ থেকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বার্তা

দৈনিক আমাদের সংবাদ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক শাওন আহমেদ বলেন, বর্তমান বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় গেম বলতে গেলে ‘ফ্রি ফায়ার এবং পাবজি’ নামের দুটি গেম, যা আজকাল মাত্রাতিরিক্তভাবে খেলতে দেখা যায়। এছাড়াও টিকটক এর মত সোশ্যাল মিডিয়াতে বেহায়াপনা,অশ্লীল ভিডিওর জন্য বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর–কিশোরী, যুব সমাজ এবং শিশু-কিশোরের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে যা সত্যি ধ্বংসের পথে যাচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম।

এ ক্ষেত্রে মা–বাবার ভূমিকাও প্রভাব ফেলে সাংবাদিক শাওন এসব বিষয় মন্তব্য করেন। দেখা যায়, মা–বাবা তাঁদের ব্যস্ত সময়ে সন্তানের সঠিক খেয়াল রাখতে পারেন না। সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। ব্যস্ততার অজুহাতে সন্তানের হাতে তুলে দেন মুঠোফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার। মা–বাবা তাঁদের সন্তানের হাতে এ ধরনের ডিভাইস তুলে দিয়ে নিজেরা স্বস্তি অনুভব করেন। অথচ খোঁজখবর রাখেন না, তাঁর সন্তান এগুলোর সঠিক ব্যবহার করছে কি না। এদিকে সন্তানেরা স্বাধীনতা পেয়ে যায় ইন্টারনেট দুনিয়ায়। পড়াশোনা বাদ দিয়ে নিজের খেয়ালখুশিমতো দিনরাত ইন্টারনেটের বিভিন্ন গেমিং সাইট বা অনলাইন গেমে মেতে ওঠে, যা একসময় আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়। ঘরে আবদ্ধ হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গেম খেলায় মগ্ন হয়ে থাকে। খাওয়াদাওয়ার কথা ভুলে সব চিন্তাচেতনা গেমের প্রতি দিয়ে দেয়। সব আনন্দ যেন অনলাইন গেমজুড়ে। এদিকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই ডেটা অন করে গেম খেলা শুরু করে চলতে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। গেমের প্রতি আসক্তির ফলে পড়াশোনা বা স্বাস্থের প্রতি কোনো খেয়াল থাকে না। মেজাজ থাকে সর্বদা খিটখিটে। পরিবারের কেউ ডাকলে সারা না দিয়ে রাগারাগির পর্যায়েও চলে যায়। এ ধরনের আচারণগত সমস্যাগুলো সামাজিক জীবন ও তরুণ প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ।

এসব গেম খেলতে প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত ডেটার। ডেটা প্যাক কিনতে অনেকে মিথ্যা বলে, বাজারের টাকা মেরে বা না খেয়ে ডেটা প্যাক কিনে গেম খেলায় মগ্ন থাকে। মস্তিষ্কজুড়ে শুধুই গেমের প্রতি আসক্তি জন্মায়। ফলে ব্যক্তিগত জীবন বাধাগ্রস্ত হয়। যেকোনো কাজের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়। পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ হ্রাস পায় এবং নানা ধরনের পারিবারিক সমস্যা দেখা দেয়। আর এসব সমস্যার মূল কারণ এখন অনলাইন গেমের প্রতি আসক্তি।

সাংবাদিক শাওন আরও বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্ম যেভাবে এসব অনলাইন গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে, চাইলে এর থেকে বেরিয়ে আসাও সম্ভব। শুধু দরকার একটু পারিবারিক ও নিজস্ব সচেতনতা। নিজের মধ্যে থাকতে হবে তীব্র ইচ্ছাশক্তি। জীবন নতুনভাবে সাজাতে নতুন রুটিন করে চলতে পারলে এ ধরনের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসা সহজ হবে। ইন্টারনেটে একটি নির্দিষ্ট সময়ের বেশি সময় দেওয়া যাবে না, নিজের কাজগুলোর প্রতি বেশি সময় দিতে হবে, খেলাধুলা, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প–আড্ডায় সময় দিতে হবে। আর বইকে সবচেয়ে বেশি আপন করে নিতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক চর্চায় নিজেকে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে গেমের প্রতি আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে। তাই তরুণ প্রজন্মকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে এবং বিশ্বদরবারে তাঁদের সফলতার শিখরে পৌঁছাতে মাদকাসক্তিকে না বলার মতো অনলাইন গেমের প্রতি তরুণদের আসক্তিকেও না বলতে হবে।