কুরবানি ঈদকে সামনে রেখে নাটোরের চামড়ার আড়তগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

0
206

আল আমিন,নাটোর প্রতিনিধি:- দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁচা চামড়ার আড়ত নাটোর শহরের চকবৈদ্যনাথ এলাকায় অবস্থিত। সারাদেশের প্রায় ৩৫ জেলার চামড়া আসে এ আড়তে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নাটোরের চামড়ার আড়তগুলোতে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতির কাজ।

ইতিমধ্যে আড়ত গুলোতে চলছে ধোঁয়ামোছা, সংস্কার ও রংয়ের কাজ। সেই সাথে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রধান উপকরণ লবণ রাখা হয়েছে। শ্রমিক সংকট যেন না হয় সেজন্য আগে থেকে ব্যবসায়ীরা অগ্রিম টাকা দিয়ে শ্রমিক ও কর্মচারীদের ভাড়া করেছেন। শেষ সময়ে আড়তগুলোতে শ্রমিক, কুলি, ব্যাপারি ও মালিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে নাটোর শহরের চকবৈদ্যনাথ এলাকার চামড়ার আড়ত ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁচা চামড়ার আড়ত নাটোরে ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ আড়ত রয়েছে। আড়ত গুলোতে বগুড়া, পাবনা, রংপুর, গাইবান্ধা, ঠাঁকুরগাঁও, নঁওগা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্ঠিয়াসহ সারাদেশের প্রায় ৩৫ জেলার চামড়া আসে এ আড়তে। তারপর সেই কাঁচা চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতি বছর কোরবানি ঈদের সময় দেশের মোট ৪৫ থেকে ৫০ ভাগ চামড়া নাটোরের চামড়ার আড়ত থেকে ট্রাকযোগে ঢাকার ট্যানারিগুলোতে পাঠানো হয়।

চামড়া ব্যবসায়ী রকিব উদ্দিন কমল বলেন, কোরবানির ঈদের জন্য আমরা ব্যবসায়ীরা আড়ত প্রস্তুত করেছি। আশা করছি, এ বছর চামড়ার ব্যবসা ভালো হবে। সেই সাথে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বৃহত্তর নাটোরের আড়তে কাঁচা চামড়া আসবে। প্রত্যেক আড়তগুলোতে চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করছেন ব্যবসায়ীরা।

চামড়া ব্যবসায়ী আরজু হোসেন বলেন, গত দুইবছর করোনার জন্য চামড়ার ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়তে হয়েছে। এ বছর নতুন ভাবে কোরবানির চামড়া কেনার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এ বছর নাটোরে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া বেচাকেনা হবে। বিগত দিনের লোকসান ব্যবসায়ীরা পুষিয়ে নিতে পারবে বলে জানান তিনি।

চামড়া ব্যবসায়ী মো. মাসুম আলী বলেন, ঢাকার বাহিরে সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার মার্কেট হচ্ছে নাটোর। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা ১ মাস আগ থেকেই আড়ত সংস্কার, রংয়ের কাজসহ ধোয়ামোছার কাজে ব্যস্ত। আমরা আর্থিক ভাবেও প্রস্তুত রয়েছি। আশা করছি এ বছর চামড়ার বেচাকেনা জমজমাট হবে।

চামড়া ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সরকার বলেন, চামড়ার প্রধান উপকরণ হচ্ছে লবণ। কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রতি চামড়ায় ৪ থেকে ৫ কেজি লবণের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে লবণের দাম বস্তা প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে এবার চামড়ার খরচটা কিছুটা বাড়বে। যদি সরকার ভর্তুকি মূল্যে আমাদের লবণ দেয় তাহলে আমরা উপকৃত হবো।

চামড়া ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বলেন, এ বছর সরকার গরুর চামড়ার দাম ৪০ থেকে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে। আমরা চামড়া কেনার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। ঈদের দিন বিকেল থেকে আড়তে চামড়া আসা শুরু হবে। এজন্য লবণ, শ্রমিক ও কর্মচারী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে চামড়া আসার সাথে সাথে চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। চামড়া যেন নষ্ট বা পচে না যায় সে দিকে নজর রয়েছে আমাদের।

চামড়া ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, ২০ বছর ধরে এ চামড়া ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এক সময় চামড়া ব্যবসা করে অনেক ব্যবসায়ী লাভবান হয়েছেন। বর্তমানে কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় আগের মতো ব্যবসা নেই। বর্তমানে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন বাড়ার কারণে চামড়ার ব্যবসায় লাভ কমে গেছে।

নাটোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ীরা কোরবানির চামড়া কেনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমরা আশা করছি, এ বছরে কয়েক শত কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হবে। আমরা ব্যবসায়ীদের বলেছি, যাতে চামড়া নষ্ট বা পচে না যায় সেদিকে নজর দিতে। চামড়া আড়তে আসার সঙ্গে সঙ্গে চামড়াতে লবণ দিয়ে যেন সংরক্ষণ করা হয়।

নাটোর চামড়া ব্যবসায় সমিতি গ্রুপের সভাপতি মো. মোকছেদ আলী বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নাটোরের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার আড়ত প্রস্তুত করা হয়েছে। এ বছর কোরবানির ঈদে পর্যাপ্ত পরিমাণে চামড়া সংগ্রহ করতে পারব। এজন্য প্রত্যক আড়তগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।